॥ এরশাদ মজুমদার ॥
জেনারেল মইন ও সাবেক আমলা ফখরুদ্দীনের তথাকথিত কেয়ারটেকার সরকারের আমল থেকে বিগত ছয় বছর ধরে আবাসন শিল্পে মন্দা বিরাজ করছে। এই শিল্পের উদ্যোক্তাদের বড় আশা ছিল রাজনৈতিক সরকার এলে মন্দা ভাব কিছুটা হলেও কেটে যাবে। বড়ই দুঃখের বিষয়, সেই মন্দা এখনো জারি রয়েছে। অপর দিকে রাজনৈতিক কারণে আবাসন শিল্পের সংগঠন রিহ্যাবেরও এখন খুবই দুরবস্থা যাচ্ছে। সেখানে নির্বাচন হচ্ছে না কয়েক বছর ধরে। এক সরকারি এমপি সভাপতি হয়ে বসে আছেন। ফলে রিহ্যাবের কার্যক্রম এক ধরনের স্থবির হয়ে আছে। রিহ্যাবের মর্যাদা এখন আর আগের মতো নেই। সদস্যদের ভেতর নানা গ্রুপ। ঠিক এমনি এক সময়ে ভারতের সাহারা গ্রুপ এসেছে বাংলাদেশে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করতে। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, সাহারা বাংলাদেশে হঠাৎ করে আসেনি। পর্দার পেছনে সাহারার আগমনকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রস্তুতি চলছিল। দিনণ এবং লেনদেন সব ঠিকঠাক করেই সাহারা বাংলাদেশে এসেছে। সাহারার আগমনকে হিন্দুস্তানি ভাষায় ধামাকা বলা হয়। এসেই মনে হলো ভিনি ভিসি ভিডি। মানেÑ আসলাম দেখলাম আর জয় করলাম। প্রতিমন্ত্রীর কোলাকুলির দৃশ্য আমরা টিভিতে দেখেছি। আহা সে কী আনন্দের দৃশ্য! না বলা কথা ছিল, ভাই, এত দিন পরে কেন এলে। আমরা তো বসেই আছি তোমাদের আগমনের জন্য। সেই যে পাকিস্তানি জেনারেলকে পরাজিত করে আমাদের রাজা বানালে, তারপর তো দেখতে এলে না। এত দিন তো অনেক কিছুই নিয়েছ, শুধু বাকি ছিল আমার দেশের মাটি। তুমি তো বলেছ ভাই, মায়ের কাছে এ দেশের অনেক গল্প শুনেছ বাল্যকালে। এখানে তোমার বাড়ি। তাহলে তো তোমার হক আছে আলবত। কোম্পানির নাম দিয়েছ মাতৃভূমি। আহা, কী আবেগি নাম! দেশপ্রেম না থাকলে অমন নাম কেউ রাখে কি? সবচেয়ে ভালো কাজ করেছ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে কাজটা করাচ্ছ। ব্যবসায়ীদের নাকি এ রকমই নিয়ম। যার কাছে মতা আছে তার সাথে হাত মেলাও। তাহলে ব্যবসায়ের কাজটা খুবই স্মুথ ও সোজা হয়ে যায়। সে দিক থেকে সাহারা ভাই তুমি সঠিক পথে আছো। আর একেবারেই সঠিক সময়ে এসে গেছ। তোমাদের পুরনো ভিটেমাটি ফেরত দেয়ার জন্য আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
ইতোমধ্যে খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে, শোভা বাজারের মহারাজার নাকি বিক্রমপুরে এক লাখ একর জমি পড়ে আছে। এটা জমিদারির জায়গা, না খাসজমি তা আমরা এখনো জানতে পারিনি। সাহারা ভাইয়েরও নাকি মাত্র এক লাখ একর জমির দরকার। ১৬০৮ বা ১০ সালে জব চার্নক গরিব চাষিদের কাছ থেকে কোলকাতা, গোবিন্দপুর ও সুতানুটি নামের তিনটি গ্রাম কিনে শহরের পত্তন করেছিলেন। সেই শহরই কোলকাতা শহর নামে পরিচিত হয়েছে। আমাদের কবিগুরুর বাপ-দাদারাও কোলকাতা শহরে গিয়ে জজমানি শুরু করেছিলেন। সেখান থেকেই তারা ঠাকুর বলে পরিচিতি পান। আসলে ছিলেন কুশারী। নয়া ঠাকুরদের কপাল ভালো, ১৭৫৭ সালে ইংরেজরা বাংলা দখল করে নিজেদের রাজত্ব শুরু করেছিলেন। আর যায় কোথায়? নয়া ঠাকুরদের কপাল খুলে গেল। কাশিমবাজার কুঠিতে ইংরেজরা যাদের সাথে রেখে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল, তাদের একজন ছিলেন শোভা বাজারের জমিদার। ১৯০ বছর শোষণের পরও ইংরেজরা আমাদের নমস্ব। তাহলে ইংরেজের খয়ের খাঁ শোভা বাজারের জমিদার বংশও নমস্ব হবেন না কেনো?
দেশের বড় বড় অর্থনীতিবিদ বলেছেন, সাহারা গ্রুপ আবাসন ছাড়া অন্য খাতে, যেমন বিদ্যুৎ, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করছে না কেন? আবাসন খাতে তো আমাদের বড় বড় ডেভেলপার আছেন। তারা তো সংবাদ সম্মেলন করেই বলেছেন, সুযোগ পেলে তারাও বড় বড় স্যাটেলাইট শহর বানাতে পারবেন। স্থানীয় ডেভেলপাররা হক-হালালি কথা বলেছেন। দৈনিক মানবজমিন ইতোমধ্যে সাহারা গ্রুপ সম্পর্কে বড় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ভারতে সাহারা গ্রুপের ইমেজ মোটেই ভালো নয়। যেখানে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে সরকার প্রায় বছরখানেক ধরে নানা অসুবিধায় আছে, সেখানে সাহারা গ্রুপকে ওই সেতুর জন্য বিনিয়োগ করতে আহ্বান না করে আবাসন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানানোর ব্যাপারটা রহস্যজনক। তাও আবার প্রধানমন্ত্রীর অতি নিকটাত্মীয়কে সাহারার পার্টনার করে। এই তো ক’দিন আগে দেখলাম, সাহারা গ্রুপ আমাদের ক্রিকেট বোর্ডকেও শত শত কোটি টাকা দিয়ে সাহায্য করবে। আসতে না আসতেই নানা দিকে চোখ পড়েছে সাহারার। ক’দিন পরে শুনব সাহারা মিডিয়াতেও বিনিয়োগ করবে এবং সেখানে স্লিপিং পার্টনার হবেন প্রধানমন্ত্রীর চোখের মণি। হঠাৎ করে সাহারাকে নিয়ে এমন হইচই কেন শুরু হয়েছে বুঝতে পারি না।
বাংলাদেশের অনেক আবাসন ব্যবসায়ী মিডিয়ায় পুঁজি বিনিয়োগ করে নিজেরাই নিজেদের কামড়াচ্ছেন। নিজেদের মালিকানার মিডিয়াগুলোকে প্রতিপকে ঘায়েল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। আবাসন ব্যবসায়ীদের এসব কাগজ বা টিভি চ্যানেলে অনেক নামীদামি সাংবাদিক কাজ করছেন এবং বিভিন্ন ফোরামে ফোরামে মালিকের পে বেশরম ওকালতি করছেন। দ্বিতীয়টি হলো পোশাক রফতানিকারকেরা আর তৃতীয়টি আবাসন শিল্পের মালিকেরা। এ তিনটি সেক্টরে অনিয়ম আর দুর্নীতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তাই জেনারেল মইনের সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি বিপদ নেমে এসেছিল এদের ওপর। যদিও আমরা তা সমর্থন করিনি। কারণ ওই সময়ের হামলার ফলে অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। দুর্নীতি দমনের কথা বলে সেই সরকারের কর্তারা ব্যাপক দুর্নীতি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বহু ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা দিয়ে অত্যাচার থেকে রা পেয়েছে। জেনারেল মইনের সরকারের ভয়ে যারা দেশত্যাগ করেছিলেন, তারাই পরে একই মঞ্চে বসে লেনদেনের কথা বলেছেন।
আমার ছেলে আমাকে প্রশ্ন করেছে, বাবা তুমি কি বর্তমান অসাম্যতার বেনিফিসিয়ারি? উত্তরে আমি হ্যাঁ-সূচক জবাব দিয়েছিলাম। আমিও তো এই সমাজের একজন সুবিধাভোগী। বিগত ৬৪ বছরে আমাদের এই দেশে, আমাদের সমাজে অশিা, নিররতা, দারিদ্র্য আর শোষণ অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে চালু রয়েছে। মুক্তির আশা করে ১৯৭১ সালে আমরা পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করে বাংলাদেশ বানিয়েছি। স্বাধীন বাংলাদেশেরও ৪০ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। ১৯৭০ সালে যে লোকটি ২০০ টাকার কেরানি ছিলেন সেই লোকটি এখন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। যে লোকটি ১৯৭০ সালে দুই টাকা রোজ মজুরি পেতেন তিনি এখন হয়তো ৩০০ টাকা পান। ১৯৭০ সালে এক কেজি চালের দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ পয়সা। আর এখন এক কেজি চালের দাম ৩০ থেকে ৭০ টাকা। যিনি ২০০ টাকা বেতন থেকে দুই হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তিনি খান ৭০ টাকা দামের চাল। হয়তো তিনি জানেনও না চালের কেজি কত? কিন্তু ৩০০ টাকার দিনমজুরকে জানতে হয়। ক’দিন আগে সোনাগাজীর কাশেমের সাথে দেখা হয়েছিল। তারা কয়েক জেনারেশন ধরে এক নামকরা বাড়িতে কাজ করে। কিন্তু ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন করতে পারেনি। কারণ লেখাপড়া শেখেনি। সমাজ তাদের লেখাপড়া শিখতে দেয়নি। কাশেমের মেয়ে এসএসসি পাস করেছে কিন্তু টাকার অভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারছে না। বাড়তি আয়ের জন্য কাশেমের একটি চাকরি দরকার। অপর দিকে মেয়ের বিয়ে দিতে গেলেও যৌতুকের জন্য কাশেমের লাখখানেক টাকা লাগবে। আপনাদের একজন কাশেমের খবর দিলাম। বাংলাদেশের আরেকজন স্বাধীন নাগরিকের কথা বলছি। ইনি একজন মহাগরিব নিরর মহিলা। স্বামী তালাক দিয়ে চলে গেছেন। মহিলার দুই মেয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে। আর মহিলা ভিা করেন। এই সমাজই ওই পরিবারটিকে শোষণ করছে। এটি চলছে বলেই আমি বাসার জন্য কাজের মেয়ে পাই অতি সস্তায়। রাস্তায় রিকশা, মুটে, শিশুশ্রমিক পাওয়া যায়। ওরা গরিব ও শক্তিহীন হওয়ার কারণেই বাংলাদেশে পোশাক শিল্প গড়ে উঠেছে। ওরা গরিব বলেই জনশক্তি ব্যবসায় রমরমা হয়ে উঠেছে।
শত চেষ্টা করেও আবাসন ব্যবসায় নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। এ ব্যাপারে সরকারও উদাসীন। সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলোও উদাসীন। রিহ্যাব ছাড়াও কয়েক হাজার কোম্পানি ফ্যাটের ব্যবসায় করছে। যেকোনো লোক যেকোনো সময় এ ব্যবসায় শুরু করতে পারে। এখন এ ব্যবসায় জেলা ও উপজেলা শহরে চলে গেছে। রাজধানীতে অভিজাত এলাকার জমির মালিকেরা কিছুটা বেনিফিট পাচ্ছেন। এসব এলাকায় জমির দামের কোনো ঠিকঠিকানা নেই। ক্রেতারা নাকি বলেন, জমি আছে কি না বলুন। দাম যা চাইবেন তাই পাবেন। তবে বিষয়টা গোপন রাখতে হবে। এসব এলাকার জমি আবার বিতরণ করে সরকার। কাঠা ১৫-২০ লাখ টাকা। কিন্তু বাজারদাম কাঠাপ্রতি কয়েক কোটি টাকা। এর মানে হচ্ছে, চেনাজানা মানুষকে রাতারাতি ধনবান করে দেয়া। আবাসন ব্যবসায়ীরাও ৫০ কোটি টাকার জমি পাঁচ কোটি টাকা নগদ দিয়ে পজেশন নিয়ে নেন আর বিজ্ঞাপন দিতে থাকেন। আর টাকা আসতে থাকে। দু-তিন বছর পরে ফ্যাটের ডেলিভারি পাবেন, এখন থেকেই মাসে লাখ লাখ টাকা কিস্তি দিতে থাকেন। একটি ফ্যাটের দাম দুই কোটি টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা। এখানেই তো কালো টাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। টাকার হিসাব চাইলে তো ফ্যাট ব্যবসায় হবে না, ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে না। তাই কালো টাকাকে কালো জায়গা থেকে সাদা জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। তাই তো সাদা মনের মানুষ খুঁজতে গিয়ে একজন ধনী মানুষকেও পাওয়া যায়নি। সব সাদা মনের মানুষ সাদামাটা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। ধন তাদের ধারেকাছেও আসতে চায় না। রাষ্ট্র নিজেই কালো টাকার জন্ম দেয়। রাষ্ট্রের প্রিয় মানুষেরাই কালো টাকার মালিক হন। রাষ্ট্র চাওয়া মাত্রই আপনাকে ধনী বানিয়ে দিতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, ওই ধন কালো না সাদা? ১৯৭২ সাল থেকেই আমি কালো টাকার বিষয়ে লিখে আসছি। সাদাকালো শিরোনামে একটি নিয়মিত কলাম লিখতাম দৈনিক জনপদ-এ। আমাদের যে রাষ্ট্রব্যবস্থা, তাতে কালো টাকার জন্ম একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। যেমন বিয়ে না করে সন্তান জন্ম দেয়া একটি অবৈধ কাজ। ধর্ম ও আইনের চোখে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নারী-পুরুষের অবৈধ মিলন এ জগতের কোথাও থেমে নেই। কোন সমাজ এই অবৈধ কাজকে স্বীকৃতি দিয়ে বৈধতা দিয়েছে। তেমনি কালো টাকারও আইনি চোখে স্বীকৃতি নেই। কিন্তু রাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে প্রতিনিয়তই কালো টাকার জন্ম হচ্ছে। যারা কালো টাকার মালিক হন তারা রাষ্ট্রের বন্ধু বা বন্ধুদের বন্ধু। যেমনÑ পুঁজি বিকাশের জন্য উদ্যোক্তাদের রাষ্ট্র নানা রকম সুযোগ দিয়ে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানে পুঁজি বিকাশের কথা বলে ১৯৬০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা দাবি করে দেনদরবার করেছিলেন। সে সময় বেশ কিছু ২৫০ লুমের পাটকল স্থাপিত হয়েছিল। একই সময়ে ওজিএল বা ওপেন জেনারেল লাইসেন্সের কথা বলে বাঙালিদের পুঁজি গঠনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে যে কালো টাকা লুকিয়ে আছে তা বিনা কর বা জরিমানায় সাদা করলে কয়েকটি পদ্মা সেতু হতে পারে। কালো টাকার জন্ম হয় চলমান রাজস্বব্যবস্থার কারণে। একটু আগেই বলেছি, রাজউকের প্লট ২০ লাখ টাকায় যখন কাঠা বিক্রি হয় তখন এর বাজারদর তিন কোটি টাকা। এই প্লটগুলো পান রাষ্ট্রের বন্ধুরা। এই প্লট যখন কেউ বিক্রি করেন তখন কি দলিলে তিন কোটি টাকা দেখান? না, দেখান না। এভাবে জমি বেচাকেনার সময়ও দলিলে আসল দাম উল্লেখ করা হয় না। প্রতিদিনই কালো টাকার জন্ম হচ্ছে, আর একে সাদা করার জন্য সরকারের ওপর চাপ থাকবে। কালো টাকা সবচেয়ে বেশি থাকে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, রাজনীতিক, আমলা ও সরকারি কর্মচারীদের কাছে। এবার রাজনৈতিক কারণে যে ব্যাংকের অনুমতি দেয়া হয়েছে, তাতে লোকজন পরিচালক হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা দিয়ে। কিন্তু কাগজ-কলমে দেখাচ্ছে ১০ কোটি টাকা। যিনি রাজনৈতিক কারণে অনুমতি পেয়েছেন তার কোনো পুঁজি লাগবে না। তিনি হবেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান। শুধু অনুমতির তদবির করার জন্যই তিনি পাবেন হয়তো চার-পাঁচ শ’ কোটি টাকা। অথচ এই টাকা তিনি জীবনেও দেখেননি।
আবাসন ও চিকিৎসা খাতেও কালো টাকার ছড়াছড়ি। রাতারাতি ধনী হওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় খাত। ২০ বছর আগে অজানা অচেনা এক ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে এখন হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ, ওষুধ কোম্পানি, রিয়েল এস্টেটের মালিক। যেখানেই ব্যবসায়ের দ্রুত বিকাশ হয়েছে সেখানেই কালো জন্ম হয়েছে। অনেকে বলেন, আমরা তো টাকা বিদেশে নিয়ে যাইনি; দেশেই বিনিয়োগ করেছি। হাজার হাজার লোক কাজ করে। আমাদের ধনীদের ৮০ ভাগই বিদেশে বাড়ি কিনেছেন। কিন্তু দেশ থেকে কোনো টাকা বিদেশে নিয়ে যাননি। অনেক রাজনীতিকও বিদেশে বাড়ি কিনেছেন। এসব তো কালো টাকারই অবদান। ধনীদের আরেকটি বড় কাজ হচ্ছে, ছেলেমেয়েদের বিয়েতে দরাজদিলে কালো টাকার ব্যবহার করা। মুম্বাই সিনেমা দেখে দেখে বিয়ের অনুষ্ঠান তৈরি করা হয়। দাওয়াতের কার্ড থাকে ১৬-১৭টি। এসব বিয়েতে সমাজ ও রাষ্ট্রের নামীদামি তারকারা উপস্থিত থাকেন। এমনকি কোনো কোনো অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীরাও থাকেন।
ভারতের সাহারা গ্রুপ তেমনি একটি নামজাদা কালো টাকার মালিক। সেই টাকা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্যই সাহারা বাংলাদেশে আসছে। হয়তো তাকে টাকাও আনতে হবে না। স্থানীয় সহযোগীরাই হয়তো কালো টাকার জোগান দেবে। যেমন করে জগৎশেঠ কাইভকে টাকার জোগান দিয়েছিল। এমনও হতে পারে সরকার বলবে যত টাকা আনো কোনো কর বা শুল্ক দিতে হবে না। আবাসন খাতে বিদেশী বিনিয়োগ অল্পস্বল্প এখনো আসছে। কিন্তু তারা সরকারের আনুকূল্য পাচ্ছে না। হয়তো রাজউক বা সরকার এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। বাংলাদেশে সাহারা আসার ব্যাপারে হয়তো কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। এটা আবাসন খাতে বিনিয়োগ, না রাজনীতি তা এখনো স্পষ্ট নয়। অনেকেই বলছেন, সাহারার বিনিয়োগের বিষয়টি এখনো খোলাসা হয়নি। সাহারা কী বিনিয়োগ করবে? কত টাকা বিনিয়োগ করবে দেশবাসী তা জানে না। রাজউক কী চুক্তি করেছে তাও প্রকাশ করা হয়নি। রাজউক যদি সাহারাকে জমি দখল করে দেয় তাহলে দেশী বিনিয়োগকারীদের সেই সুযোগ দেবে না কেন? সরকারই বা এ ব্যাপারে এত রাখঢাক করছে কেন?
লেখক : কবি ও সাংবাদিক
ershadmz40@yahoo.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন